v

রাখিবন্ধন উৎসব (হিন্দিতে: रक्षाबंधन) বা রাখীবন্ধন (হিন্দি: राखी‎‎) বা রাখিপূর্ণিমা হল ভারতের একটি উৎসব। এই উৎসব ভাই ও বোনের মধ্যে প্রীতিবন্ধনের উৎসব।হিন্দু, জৈন ও শিখ সম্প্রদায়ের মানুষরা এই উৎসব পালন করে।এই দিন দিদি বা বোনেরা সকাল সকাল স্নান করে ও তাদের ভাই বা দাদার হাতে রাখি নামে একটি পবিত্র সুতো বেঁধে দেয় ও কপালে চন্দনের ফোঁটা দেয়। এই রাখী ভাই বা দাদার প্রতি দিদি বা বোনের ভালবাসা ও ভাইয়ের মঙ্গলকামনা এবং দিদি বা বোনকে আজীবন রক্ষা করার ভাই বা দাদার শপথের প্রতীক। হিন্দু ক্যালেন্ডার অনুসারে, শ্রাবন মাসের পূর্ণিমা তিথিতে এই উৎসব উদযাপিত হয় ।
অনেক প্রাচীন প্রথা বা উৎসব এই রাখিবন্ধন সম্পর্কে অনেক কাহিনি প্রচলিত আছে, পুরান থেকে শুরু করে অদূর ইতিহাসে পর্যন্ত।

·         হিন্দু পুরানে দেবরাজের কাহিনি
·         যমরাজের কাহিনি
·         লক্ষী ও বানররাজ বালির কাহিনি
·         শ্রীকৃষ্ণ ও দ্রোপদীর কাহিনি
·         সিদ্ধিদাতা গনেশের মানস কন্যা সন্তোষী মাতার ও শুভ-লাভ এর কাহিনি
·         আলেকজান্ডার দি গ্রে্টের স্ত্রী রোক্সানা ও পুরুর কাহিনি
·         হুমায়ুন ও চিতোরের রানি কর্ণবতীর কাহিনি
·         রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও রাখি বন্ধন

v  দেবরাজ ইন্দ্রের সাথে রাখির কাহিনিঃ হিন্দু পুরান অনুযায়ী একবার দেবতা ও রাক্ষসদের যুদ্ধে দেবতারা প্রায় পরাজিত হতে চলেছিল। ইন্দ্র তখন দেবগুরু বৃহস্পতির শরনাপন্ন হন। এবং তিনি একটি মন্ত্রপূত রাখি ইন্দ্রকে দেন এবং বলেন এই পূর্ণিমার দিনে অর্থাৎ শ্রাবন মাসের পূর্ণিমার দিনে ইন্দ্রের স্ত্রী শচী যেন এটা তার হাতে বেঁধে দেন। এবং এর পরেই দেবতারা যুদ্ধে জয়লাভ করে। এই গল্পের সাথে আমাদের প্রচলিত সংস্কারের মিল না পেলেও এখানে দেখতে প[ই রাখি কিভাবে আমাদের রক্ষার কামনাতে পালিত হয়ে আসছে।

v যমরাজের কাহিনিঃ বলা হয় যমের বোন যমুনা যমের অমরত্বের জন্য তার হাতে একটি রাখি পরিয়ে দিয়েছিল। এরপর থেকেই যমরাজ কথা দেন যে যার হাতে তার বোন রাখি পরিয়ে দেবে যমরাজ তাকে স্বয়ং রক্ষা করবেন।

v লক্ষী ও বানররাজ বালিঃ একবার শ্রাবন মাসের পূর্ণিমার দিন এক হতদরিদ্র নারীর রূপ ধরে লক্ষীদেবী বালির কাছে আশ্রয় চান। বালি তাকে নিজের প্রাসাদে আশ্রয় দেন। এবং প্রতিদান হিসাবে লক্ষীদেবী বালির হাতে একটি কাপড়ের টুকরো বেঁধে দেন ও তার মঙ্গল কামনা করেন।

v শ্রীকৃষ্ণ ও দ্রোপদীর কাহিনিঃ শ্রীকৃষ্ণ যখন শিশুপালকে বধ করেন তখন তার সঙ্গে লড়াই করার সময় তার হাতে কিছুটা চোট লেগে গিয়েছিল। দ্রোপদী নিজের শাড়ির আচল ছিড়ে শ্রীকৃষ্ণের হাতে বেঁধে তাকে রক্ষা করেন এবং শ্রীকৃষ্ণ তাকে রক্ষার জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হন। পরবর্তীকালে আমরা দেখি যুধিষ্টির পাশা খেলায় হেরে যাওয়ার পর ভরা রাজসভায় দ্রোপদীর বস্ত্রহরণের চেষ্টা করা হলে শ্রীকৃষ তাকে রক্ষা করেন।

v  সিদ্ধিদাতা গণেশের মানস কন্যা সন্তোষী মাতার ও শুভ-লাভ এর কাহিনিঃ শ্রাবণ মাসের পূর্ণিমার দিন গনেশের বোন তার হাতে একটি রাখি পরিয়ে দেন। তা দেখে তার দুই পুত্র শুভ ও লাভ জেদ ধরে যে তারাও বোনের হাতে রাখি পরবে। তখন শ্রীগণেশের তৈরী দিব্য অগ্নি থেকে জন্ম নেন একটি কন্যা , যাকেই আমরা সন্তোষী মাতা হিসাবে চিনি। তারপরে সেই সন্তোষী মাতা শুভ ও লাবের হাতে রাখি পরিয়ে দেন ও তারা সন্তুষ্ট হন।

v আলেকজান্ডার দি গ্রেটএর স্ত্রী রোক্সানা ও পুরুঃ আমরা সকলেই জানি যে ৩২৬ খ্রীষ্ট পূর্বাব্দে ভারতের উত্তর দিকের সমস্ত রাজা যখন আলেকজান্ডারের বিশাল সেনাদল দেখেই বশ্যতা স্বীকার করে নিচ্ছিল তখন পুরু কিন্তু বশ্যতা স্বীকার করেনি এবং যুদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। এইসময় আলেকজান্ডার যতই শক্তিশালী হোক , নিজের দেশ থেকে আনেক দূরে এইরকম পাহাড় জঙ্গল ঘেরা অজানা যায়গাতে যুদ্ধে জয়লাভের জন্য নিশ্চিত ছিল না। এবং পুরুকে যথারীতি ভয় পেয়ে আলেকজান্ডারের স্ত্রী রোক্সানা পুরুর কাছে যান ও তার হাতে রাখি পরিয়ে দেন এবং প্রতিশ্রুতি নেন যেন তার স্বামীকে হত্যা করা না হয়। পুরু রাখির মর্যাদা বুঝতেন এবং তিনি তাকে সেই প্রতিশ্রুতি দেন।

v  হুমায়ুন ও চিতোরের রানি কর্ণবতীর কাহিনিঃ ১৫৩৫ খ্রিষ্টাব্দে গুজরাতের সুলতান বাহাদূর শাওহ যখন চিতোর আক্রমণ করেন তখন চিতোরের বিধবা রানি কর্নবতী অসহায় ছিলেন। তিনি দিল্লির সুলতান হুমায়ুনকে তখন একটি রাখি পাঠান। হুমায়ুন খুশি হন ও তার ওই বোনের মর্যাদা রক্ষার জন্য সাহয্যের হাত বাড়িয়ে দেন। কিন্তু তাএ সৈন্য চিতোর পৌছানোর আগেই সুলতান বাহাদুর শাহ দূর্গ জয় করে ফেলে । সম্ভ্রম রক্ষার্থে তিনি সেখানকার ১৩০০০ রমনীসহ জহর ব্রত পালন করে আগুনে আত্মহুতি দেন।

v রবীন্দ্রনাথ ও রাখিঃ ১৯০৫ সালে ২০ই জুলাই বঙ্গভঙ্গ ঘোষনা করেছিল ব্রিটিশ সরকার এবং এটি কার্যকর হওয়ার ছিল ১৯০৫ সালের ১৬ ই অক্টোবর অর্থাৎ বাংলায় ৩০ই আশ্বিন। সেই সময়ে জাতি ধর্ম নির্বিশেষে বঙ্গভঙ্গের বিরোধিতায় রাস্থায় নেমেছিল প্রচুর মানুষ। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ঠিক করেন সেই দিনেই অর্থাৎ ১৬ই অক্টোবর মানুষ বঙ্গভঙ্গের বিরোধিতায় একে অপরের হাতে রাখি পরাবে, কোনো হিন্দু মুসলমান ভেদাভেদ থাকবে না এবং সম্প্রীতি ও সৌভাতৃত্বের প্রকাশ ঘটবে ।

রাখিবন্ধন কি এবং কিভাবে শুরু হয়েছিল? আসুন পুরান ও ইতিহাস থেকে জেনে নিই